PageRank অ্যালগরিদম কি/কেন/কিভাবে !
PageRank অ্যালগরিদম কি?
PageRank একটি অ্যালগরিদম যা গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন তৈরি করেন। এটি একটি পৃষ্ঠার গুরুত্ব বা জনপ্রিয়তা পরিমাপ করার জন্য তৈরি করা হয়, যেখানে বিভিন্ন ওয়েব পৃষ্ঠার মধ্যে সংযোগগুলি বিশ্লেষণ করা হয়। এই অ্যালগরিদমটি লিঙ্কগুলিকে “ভোট” হিসেবে দেখে এবং প্রতিটি পৃষ্ঠার মান নির্ধারণ করে, লিঙ্কের সংখ্যা ও গুণমান অনুসারে।
PageRank অ্যালগরিদম কেন ব্যবহার করা হয়?
PageRank অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয় সার্চ ইঞ্জিনে কোন পৃষ্ঠাটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করতে। এটি সার্চ ইঞ্জিনে এমন একটি সিস্টেম তৈরি করে যা প্রতিটি পৃষ্ঠাকে তার লিঙ্ক এবং মানের উপর ভিত্তি করে র্যাঙ্ক করতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের অনুসন্ধান রেজাল্টে আরও প্রাসঙ্গিক এবং নির্ভরযোগ্য পৃষ্ঠা পেয়ে থাকে।
SEO-এর দৃষ্টিকোণ থেকে PageRank এর দিকসমূহ আরও বিস্তৃতভাবে বোঝাতে নিচে কিছু অতিরিক্ত দিক বিবেচনা করা হয়েছে:
1. ইন্টারনাল লিঙ্কিং স্ট্র্যাটেজি:
- ইন্টারনাল লিঙ্কিং: শুধুমাত্র বাইরের লিঙ্ক নয়, বরং সাইটের ভেতরের লিঙ্কগুলোকেও PageRank প্রভাবিত করে। একটি কার্যকর অভ্যন্তরীণ লিঙ্কিং স্ট্রাকচার PageRank সাইটের পৃষ্ঠাগুলোর মধ্যে সঠিকভাবে বিতরণ করতে সহায়ক। গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠাগুলি হোমপেজ বা জনপ্রিয় পৃষ্ঠাগুলোর কাছাকাছি রাখলে এদের র্যাঙ্কিং বৃদ্ধি পায় এবং Google-এ সহজে প্রাসঙ্গিক হিসেবে চিহ্নিত হয়।
2. লিঙ্ক গুণমান ও উৎসের প্রাসঙ্গিকতা:
- Google এখন শুধুমাত্র লিঙ্কের সংখ্যা নয়, লিঙ্কের গুণমান এবং প্রাসঙ্গিকতাকেও গুরুত্ব দেয়। নির্ভরযোগ্য এবং প্রাসঙ্গিক সাইট থেকে লিঙ্ক পেলে PageRank আরও কার্যকর হয়, কারণ এটি ওয়েবসাইটের গ্রহণযোগ্যতাকে বাড়িয়ে তোলে। স্প্যামিং এবং কম মানের লিঙ্ক এড়িয়ে মানসম্মত এবং প্রাসঙ্গিক লিঙ্কের দিকে মনোযোগ দিলে SEO তে বড় প্রভাব পড়ে।
3. ড্যাম্পিং ফ্যাক্টর (Damping Factor):
- ড্যাম্পিং ফ্যাক্টর হল একটি সম্ভাব্যতা যার মান সাধারণত 0.85 ধরা হয়। এটি নির্দেশ করে যে ব্যবহারকারী যে কোনও পৃষ্ঠায় প্রবেশের পরে অন্যান্য লিঙ্ক ক্লিক করে নতুন পৃষ্ঠায় যাবার সম্ভাবনা আছে। ড্যাম্পিং ফ্যাক্টরের মাধ্যমে PageRank একটি পৃষ্ঠার উপর ভিত্তি করে প্রত্যেক লিঙ্কের মাধ্যমে কতটুকু প্রভাব ফেলবে তা নির্ধারণ করে।
4. অ্যাঙ্কর টেক্সটের রিলেভেন্সি:
- লিঙ্কে ব্যবহৃত অ্যাঙ্কর টেক্সট PageRank এর গুরুত্বকে প্রভাবিত করে না ঠিকই, কিন্তু Google-এর অ্যালগরিদমে প্রাসঙ্গিকতাকে গুরুত্ব দেয়। সঠিক কীওয়ার্ড ব্যবহার করে অ্যাঙ্কর টেক্সট লিঙ্ক করলে এটি প্রাসঙ্গিকতা ও র্যাঙ্কিংয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
5. নোফলো লিঙ্ক (Nofollow Links):
- নোফলো লিঙ্কগুলি PageRank পাস করে না এবং লিঙ্ক ইক্যুইটি ভাগাভাগির প্রক্রিয়া থেকে আলাদা থাকে। এটি কম মানের লিঙ্ক বা স্প্যামিং কমানোর একটি পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। সুতরাং, একটি শক্তিশালী SEO কৌশলে নোফলো এবং ডুফলো লিঙ্কের ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নোফলো লিঙ্কগুলোও ওয়েবসাইটের প্রাকৃতিক চিত্র তৈরি করে।
6. লিঙ্ক ডিকেই (Link Decay):
- PageRank-এর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো সময়ের সাথে সাথে লিঙ্কের মান কমে যেতে পারে, যাকে লিঙ্ক ডিকেই বলা হয়। ওয়েবসাইটে পুরনো ও অনাকাঙ্ক্ষিত লিঙ্ক আপডেট বা সরানো উচিত যাতে নতুন এবং প্রাসঙ্গিক লিঙ্কের মাধ্যমে Link Equity ধরে রাখা যায়।
7. সাইট গতি এবং মোবাইল–ফ্রেন্ডলিনেস:
- যদিও এটি সরাসরি PageRank এর অংশ নয়, একটি দ্রুত এবং মোবাইল-ফ্রেন্ডলি সাইট ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করে। Google এর অ্যালগরিদমে সাইটের গতি এবং মোবাইল উপযোগীতা বড় ভূমিকা পালন করে, যা সার্বিকভাবে PageRank এর প্রভাবকে শক্তিশালী করতে পারে।
8. সাইট স্ট্রাকচার ও হায়ারার্কি:
- PageRank এর দৃষ্টিকোণ থেকে সাইটের সঠিক গঠন এবং হায়ারার্কি গুরুত্বপূর্ণ। হোমপেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠাগুলোতে লিঙ্কিং করলে PageRank এর প্রবাহ স্বাভাবিক ও কার্যকর থাকে, যা সার্চ ইঞ্জিনের ক্রলিং সহজ করে।
9. ইউজার সিগন্যাল ও এনগেজমেন্ট:
- গুগল এখন ব্যবহারকারীর ইন্টারঅ্যাকশনের সিগন্যালকেও গুরুত্ব দেয়, যেমন ক্লিক-থ্রু রেট, বাউন্স রেট, এবং সাইটে ব্যয় করা সময়। যদি কোনও পৃষ্ঠায় উচ্চ PageRank থাকে কিন্তু সেটি ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে এটি তার অবস্থান হারাতে পারে। তাই ব্যবহারকারীর জন্য প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট এবং অভিজ্ঞতা তৈরি করা SEO এবং PageRank এর দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
10. কনটেন্ট আপডেট ও ফ্রেশনেস:
- SEO তে PageRank ধরে রাখতে কনটেন্ট আপডেট এবং তাজা তথ্য প্রদান করা প্রয়োজন। নিয়মিত কন্টেন্ট আপডেটের মাধ্যমে লিঙ্ক প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখা সম্ভব, যা PageRank এর মূল্য বাড়াতে সহায়ক হয়।
- ইক্যুইটিতে প্রভাব ফেলে।
SEO-তে প্রভাব কি?
SEO-তে PageRank-এর প্রভাব বড়। এটি একটি পৃষ্ঠার গুরুত্ব নির্ধারণ করে, যা সার্চ ইঞ্জিনে তার অবস্থানকে প্রভাবিত করে। SEO তে PageRank একাধিক কৌশল, যেমন লিঙ্ক বিল্ডিং, অভ্যন্তরীণ লিঙ্কিং, এবং কন্টেন্টের মান উন্নত করার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গুগল যেমন ইউজার এনগেজমেন্ট ও কন্টেন্ট রিলেভেন্সকে বিবেচনা করে, তেমনই PageRank ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের গুণমান যাচাই করে।
PageRank এর আদর্শ বা আইডল মান নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নয়, কারণ এটি ওয়েবের সাইট এবং পৃষ্ঠাগুলোর লিঙ্কিং কাঠামোর উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। PageRank এর স্কোর সাধারণত 0 থেকে 10 এর মধ্যে ধরা হয়, যেখানে:
- PageRank 0-3: নিম্ন মানের বা নতুন সাইট, যেগুলোর লিঙ্ক বা অথরিটি কম।
- PageRank 4-6: গড় মানের সাইট, যেগুলোর কিছু ভালো মানের লিঙ্ক রয়েছে এবং এগুলোর এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা আছে।
- PageRank 7-10: অত্যন্ত উচ্চমানের ও বিশ্বাসযোগ্য সাইট, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি সংস্থা, জনপ্রিয় সংবাদপত্র, বা বড় ব্র্যান্ডের সাইট।
গুগল PageRank প্রকাশ করা বন্ধ করে দেওয়ার পর এখন সাইটগুলোর PageRank সরাসরি জানা যায় না। তবে আদর্শভাবে SEO-তে একটি পৃষ্ঠার PageRank বৃদ্ধি করার জন্য উচ্চ মানের, প্রাসঙ্গিক লিঙ্ক তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ, যা Google-এর দৃষ্টিকোণ থেকে পৃষ্ঠার গ্রহণযোগ্যতা এবং মানকে বাড়ায়।